কোনো সন্দেহ নেই বর্তমানে দ্বিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর (মাদরাসা) অস্তিত্ব মুসলমানদের জন্য আল্লাহর অনেক বড় অনুগ্রহ। এসব চার দেয়ালের দুর্বল মাদরাসাগুলো ইসলাম রক্ষায় বড় অবলম্বন। কেননা ইসলাম হলো বিশুদ্ধ বিশ্বাস ও আমলের নাম। যার মধ্যে দ্বিনদারি, মুআমালাত, মুআশারাত ও আখলাক-চরিত্র সবই অন্তর্ভুক্ত। আমল নির্ভর করে ইলমের ওপর, আর দ্বিনি ইলমের অস্তিত্ব যদিও মৌলিকভাবে মাদরাসার ওপর নির্ভরশীল নয়; কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দ্বিনি শিক্ষা মাদরাসার ওপর নির্ভরশীল।
যার গুরুত্ব কখনো লোপ পায় না
প্রথম দিকে ‘ইলমে দ্বিন’ শ্রবণের মাধ্যমে সংরক্ষিত ছিল। দিন-রাত তার প্রচার-প্রসার হতো। কিন্তু এখন না আছে প্রথম যুগের আল্লাহভীতি এবং না আছে তাদের বিস্ময়কর মেধা ও মুখস্থশক্তি। যখন মানুষের সার্বিক দ্বিনি অবস্থার অবনতি হলো তখন পূর্বসূরি আলেমরা দ্বিন সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগ দিলেন। ফলে তারা হাদিস থেকে বিধি-বিধান গবেষণা ও আহরণ করে তা সংকলন করলেন। যেন মানুষের ইসলামী শরিয়তের বিধানবলি বুঝতে সমস্যা দেখা না দেয়। বোঝা গেল, দ্বিনের প্রচার-প্রসারের জন্য বিশুদ্ধ দ্বিনি শিক্ষার প্রয়োজন ছিল। তা সংরক্ষিত থাকার জন্য গ্রন্থাবলি প্রণয়নের প্রয়োজন দেখা দেয়।
মাদরাসার অপরিহার্যতা
বর্তমানে মাদরাসাগুলোর ব্যাপারে নানা ধরনের অভিযোগ শোনা যায়। পারস্পরিক বিরোধের মতো ঘটনাও সেখানে ঘটে। তবু মাদরাসাগুলো অর্থহীন নয়। সব ধরনের অধঃপতন ও বিরোধ সত্ত্বেও মাদরাসাশিক্ষা থেকে মুসলিম সমাজ যতটুকু উপকৃত হচ্ছে সেগুলোর বিবেচনায় মাদরাসার অস্তিত্ব অপরিহার্য। তাই সব মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো মাদরাসাশিক্ষার সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসা। সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি সংশোধন করার যথাসাধ্য চেষ্টাও চালিয়ে যেতে হবে। আমি মিরাঠের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলাম, তোমরা আলেম-উলামাদের তোমাদের মুখাপেক্ষী মনে করো। যদি বিষয়টি এমনই হয়, তবে তোমরা মাদরাসায় সাহায্য দেওয়া বন্ধ করে দাও। সবাই একজোট হয়ে সাহায্য বন্ধ করে দাও। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা, আমাদের সামান্য পরোয়া নেই। আমরা ভিন্ন পেশায় নিযুক্ত হব এবং অর্থ উপার্জন করব। কিন্তু তোমাদের সন্তানদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। তারা হয়তো ধর্মহীন হবে অথবা ভিন্ন ধর্মে দীক্ষিত হবে।
আদর্শ জাতি গঠনে মাদরাসা শিক্ষা
রাসূল (সা:) শিক্ষার আলো দিয়ে একটি বর্বর ও অশিক্ষিত জাতিকে সুশিক্ষিত ও সুশৃঙ্খলিত ও সর্বোত্তম জাতিতে রূপান্তর করতে সক্ষম হন। আমাদেরও উচিত মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন ঘটিয়ে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে আসা যাতে আমাদের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তেমন কোনো পার্থক্য না থাকে। আবার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায় ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধের সমন্বয় ঘটিয়ে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে আসা উচিত যাতে মাদরাসা শিক্ষার ইসলামী ধ্যান-ধারণা ও পরিবেশের সাথে তেমন কোনো পার্থক্য না থাকে। নৈতিক, আদর্শিক ও চারিত্র্যিক দৃঢ়তাসম্পন্ন জনশক্তি উৎপাদনের জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চার কোনো বিকল্প নেই। এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটি অবশ্যই শিক্ষাব্যবস্থায় অগ্রধিকার পাওয়া উচিত। সর্বোপরি ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। তাই সন্তানকে পরিপূর্ণ ইসলামী শিক্ষাদানের যথাযথ ব্যবস্থা করা নৈতিক দায়িত্ব। এটা নবুয়তি কাজের অন্তর্ভুক্ত। পিতা-মাতা সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে পরকালে তাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সৃষ্টিকর্তা বলেন, হে আমাদের পালনকর্তা, যেসব জিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদেরকে দেখিয়ে দাও, আমরা তাদেরকে পদদলিত করব, যাতে তারা যথেষ্ট অপমানিত হয় (সূরা: হা-মীম-সিজদা, আয়াত-২৯)। অতএব আদর্শ জাতি গঠনে মাদরাসা শিক্ষা এক অপরিহার্য মাধ্যম।